রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:০৫ অপরাহ্ন
আপন নিউজ প্রতিবেদন, আমতলীঃ পায়রা নদীর ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধিতে শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক সরে যাওয়ায় ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে বরগুনার আমতলী পৌর শহর। গত ২৩ বছরেও সংস্কার হয়নি শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক। এতে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে অনেক স্থাপনা। দ্রুত সংস্কার করা না হলে বিলিন হয়ে যেতে পারে পাউবো অফিস, খাদ্যগুদাম, মুক্তিযোদ্ধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটসহ সহ¯্রাধীক বাড়ীঘর। ব্লক নদীতে সরে যাওয়ায় পদচারনায় মুখরিত পায়রা সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকা পর্যটক প্রায় শুন্য হয়ে পরেছে। দ্রুত ব্লক নির্মাণের দাবী জানান এলাকাবাসী ও পর্যটকরা।
জানাগেছে, ১৯৯৮ সালে পৌর শহরকে পায়রা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় ফেরীঘাট এলাকা থেকে পাউবোর অফিস পর্যন্ত ১২০০ মিটার শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের অধিনে সিসি ব্লক স্থাপন করা হয়। ওই সময় নিম্নমানের কাজ করায় অল্পদিনে মধ্যেই ব্লক সরে যেতে থাকে। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন ও রোয়ানু, বুলবুল ও আম্ফানের প্রভাবে আমতলী পৌর শহর সংলগ্ন পায়রা নদীর সিসি ব্লক সরে ও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, কাঠপট্রি, পুরাতন লঞ্চঘাট, শ্মশানঘাট ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ সহ¯্রাধীক বাড়ীঘর নদী বক্ষে বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৪ সালে সিডর প্রকল্পের আওতায় আমতলী পৌর শহরকে পায়রা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় ১২০০ মিটার ব্লক মেরামতের কাজ অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমবিইএল ১১৫ মিটার পায়রা নদীর তীর সংরক্ষণে সিসি ব্লক সংস্কার করে অবশিষ্ট কাজ ফেলে রেখে চলে যায়। এতে আরো হুমকির মুখে পড়ে পৌর শহর। গত ২৩ বছরে সংস্কার না করায় পায়রার ভাঙ্গনে অধিকাংশ ব্লক নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এতে বিলিন হয়ে গেছে অনেক স্থাপনা। পায়রা নদীর ভাঙ্গন থেকে আমতলী পৌরশহরকে রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
রবিবার পায়রা নদী সংলগ্ন শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, পায়রা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। এতে ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে এবং দুর্বল অনেক ব্লক ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। আমতলী স্লুইজগেট এলাকায় দু’পাশের ব্লক সরে গেছে। বাড়ীঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফেরিঘাট, শ্বশ্মানঘাট, সবুজবাগ মুক্তিযোদ্ধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লঞ্চঘাট ও খাদ্যগুদামসহ সহ¯্রাধীক বাড়ীঘর হুমকির মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় ব্লক সরে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। অপর দিকে ব্লক সরে যাওয়ায় পায়রা নদী এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সৌন্দার্য হারিয়ে যাওয়ায় আগের মত তেমন পর্যটকরা বেড়াতে আসেন না।
নারী পর্যটক মোসাঃ শাফিয়া বেগম বলেন, বিকেল বেলা বিনোদনের জন্য পায়রা নদীর ব্লকে বেড়াতে যেতাম কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। ব্লক সরে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত ব্লক নির্মাণ করা হলে ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারনায় মুখরিত হবে পায়রা নদী সংলগ্ন আমতলীর পান্নি উন্নয়ন বোর্ড এলাকা।
শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী শিপন মিস্ত্রি বলেন,পূর্ব থেকেই নদী ভেঙ্গে ব্লক সরে যেত। সিডরের প্রভাবে ব্লক সরে গিয়ে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এ এলাকায় বসবাসরত মানুষের দূর্ভোগ আরও ঘনিভূত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, খাদ্যগুদাম ঘাটসহ এলাকার অনেক ঘরবাড়ী ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
লঞ্চঘাট এলাকার শহীদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ব্লক সরে পায়রা নদীতে বিলীন হওয়ায় লঞ্চঘাট,পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ পৌর শহর হুমকির মুখে পরেছে। অতিদ্রুত ব্লক সংস্কার করা না হলে তীর ভেঙ্গে বাড়ীঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। দ্রুত পায়রা নদীতে বøক দিয়ে সংস্কারের দাবী জানাই।
আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, পায়রা নদীর ভাঙ্গনে প্রতিদিনই পৌরশহরের আয়তন ছোট হচ্ছে। ভাঙ্গনে বহু স্থাপনা হুমকির মুখে পরেছে। পুরাতন সিসি ব্লক সরে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা না হলে ভাঙ্গনের ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, এ শহরকে রক্ষায় তিন কিলোমিটার পায়রা নদীর তীরে সিসি ব্লক নির্মাণ করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কাছে দ্রুত সিসি ব্লক নির্মাণের দাবী জানান তিনি।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজিজুর রহমান সুজন বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের প্রজেক্টে আমতলী পৌর শহর রক্ষায় পায়রা নদীর ব্লক সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছি।
পাউবোর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে আমতলী পৌর শহরের শহর রক্ষা বাঁধসহ নদী ভাঙ্গন রোধে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বাজেট পাওয়া গেলে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply